হিংসা থেকে মুক্ত থাকার ৮টি উপায় (ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে)

হিংসা থেকে মুক্ত থাকার উপায় এবং দোয়া


হিংসা থেকে মুক্ত থাকার উপায় (ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে)

হিংসা (হাসাদ) একটি মারাত্মক আত্মিক ব্যাধি, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ইসলামে হিংসা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং তা থেকে মুক্ত থাকার জন্য বেশ কিছু উপায় নির্ধারিত হয়েছে।


হিংসা থেকে বাঁচার ৮টি উপায়:

১. আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল (ভরসা) রাখা

বুঝে নেওয়া যে, সকল নেয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তিনি যাকে ইচ্ছা, যা ইচ্ছা দেন।

“আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, তার রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং যার ইচ্ছা কমিয়ে দেন।” (সূরা রাদ: ২৬)


২. হিংসার বদলে দোয়া করা

কারো সফলতা দেখে হিংসা না করে তার জন্য দোয়া করা – যেমন: “আল্লাহ তাকে আরও দিন, আমাকেও দিন।”


৩. নিজের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করা

নিজে যা পেয়েছেন তা নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকলে হিংসা কমে যায়।

“তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি দৃষ্টি দাও।” (সূরা নাহল: ৫৩)


৪. আখিরাতের চিন্তা করা

হিংসা দুনিয়ার জিনিস নিয়েই হয়। আখিরাতের ফিকির থাকলে তা দূর হয়।


৫. প্রতিদিনের জিকির ও দোয়াতে নিয়মিত থাকা

“সুবহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার” — এইসব জিকির হৃদয়কে পরিষ্কার করে।


৬. সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা

হিংসুকদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহানবী ﷺ এই সূরা দুটি নিয়মিত পাঠ করতেন।

“আর আমি হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় চাই, যখন সে হিংসা করে।” (সূরা ফালাক: ৫)


৭. পরকালের জবাবদিহিতার ভয়

হিংসা একটি গুনাহ এবং এটি গোপন হলেও আল্লাহ জানেন — এই ভয় হৃদয়ে রাখলে হিংসা কমে।


৮. কোনো মুসলমান ভাইয়ের ভালো দেখলে খুশি হওয়া

রাসূল ﷺ বলেছেন:

“তোমরা কেউ তখনই প্রকৃত মুমিন হবে, যখন নিজের জন্য যা চাও, ভাইয়ের জন্যও তা চাও।”

(সহীহ বুখারী ও মুসলিম)


সংক্ষেপে মনে রাখুন:

হিংসা ধ্বংস করে আমল

দোয়া ও জিকির শুদ্ধ করে অন্তর

অন্যের ভালো দেখে খুশি হওয়া – মুমিনের পরিচয়



হিংসা ও অহংকার থেকে বাঁচার দোয়া

হিংসা ও অহংকার থেকে বাঁচার দোয়া (দুআ)

ইসলামে হিংসা (হাসাদ) ও অহংকার (তাকাব্বুর) দুটোই মারাত্মক গুনাহ। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের এসব থেকে বাঁচার জন্য কিছু দোয়া শিখিয়েছেন।


১. হিংসা থেকে বাঁচার দোয়া:

দুআ:

اللَّهُمَّ طَهِّرْ قَلْبِي مِنَ الْحَسَدِ


আল্লাহুম্মা তাহির কালবি মিনাল-হাসাদ

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে হিংসা থেকে পরিশুদ্ধ করে দাও।”


সূরা ফালাক:

“আমি আশ্রয় চাই হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।”

(সূরা আল-ফালাক: ৫)

প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ফালাক পাঠ করা উত্তম।


২. অহংকার থেকে বাঁচার দোয়া:

দুআ:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ كِبْرِهَا


"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া মিন কিবরিহা"

অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের অনিষ্ট ও অহংকার থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।”


"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া মিন কিবরিহা" একটি দোয়া, যার অর্থ হলো, "হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের (সত্তার) কুমন্ত্রণা থেকে এবং অহংকার থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।" 

এই দোয়ার মাধ্যমে একজন মুসলিম তার নিজের ভেতরের খারাপ প্রবৃত্তি ও অহংকার থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। 


আরও কিছু প্রাসঙ্গিক দোয়া:


আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি মা আমিলতু ওয়া মিন শাররি মা লাম আমাল:

"হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই সেই কাজ যা আমি করেছি তার ক্ষতি থেকে এবং যা করিনি তার ক্ষতি থেকেও।" 


আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি:

"হে আল্লাহ! আমি কুফরি, দারিদ্র্য এবং কবরের আজাব থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।" 


আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া রিজকান তাইয়্যিবান ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালান:

"হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিজিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।" 



অতিরিক্ত উপকারী দোয়া:

দুআ:

اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَوَاضِعِينَ، وَنَجِّنِي مِنَ الْمُتَكَبِّرِينَ، وَطَهِّرْ قَلْبِي مِنَ الْحَسَدِ وَالْغِلِّ وَالْحِقْدِ


আল্লাহুম্মা জালনি মিনাল-মুতাওয়াদাইইন, ওয়া নাজ্জিনি মিনাল-মুতাকাব্বিরিন, ওয়া তাহির কালবি মিনাল-হাসাদ ওয়াল-গিল ওয়াল-হিকদ।

Allāhummajʿalnī minal-mutawāḍiʿīn, wa najjinī minal-mutakabbirīn, wa ṭahhir qalbī minal-ḥasad wal-ghill wal-ḥiqd


অর্থ:

“হে আল্লাহ! আমাকে নম্র বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, অহংকারীদের থেকে মুক্ত করুন, এবং আমার অন্তরকে হিংসা, বিদ্বেষ ও ক্রোধ থেকে পরিশুদ্ধ করুন।”


এই দোয়াটির অর্থ হল: "হে আল্লাহ, আমাকে বিনয়ী করুন, অহংকার থেকে মুক্তি দিন এবং আমার অন্তরকে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা থেকে পবিত্র করুন।" এই দোয়াটি আল্লাহর কাছে বিনয়ী হওয়া, অহংকার পরিহার করা এবং হৃদয়ে বিদ্বেষ না রাখার জন্য মিনতি করার একটি মাধ্যম।


এই দোয়ার অংশগুলির অর্থ নিচে দেওয়া হল: 

আল্লাহুম্মাজ আলনী মিনাল-মুতাওয়াদ্বাইয়ীন:

হে আল্লাহ, আমাকে বিনয়ী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

ওয়া নাজ্জিনি মিনাল-মুতাকাব্বিরীন:

এবং আমাকে অহংকারীদের থেকে মুক্তি দিন।

ওয়া তাহির কালবি মিনাল-হাসাদ ওয়াল-গিল ওয়াল-হিকদ:

এবং আমার অন্তরকে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা থেকে পবিত্র করুন।

এই দোয়াটি মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আল্লাহর কাছে বিনয়ী হওয়া, অহংকার পরিহার করা এবং হৃদয়ে বিদ্বেষ না রাখার জন্য একটি শক্তিশালী প্রার্থনা।

এই দোয়াগুলো নিয়মিত পড়লে আল্লাহর রহমতে অন্তর হবে নির্মল, হিংসা-অহংকার দূর হবে ইনশাআল্লাহ।



হিংসা ও অহংকার থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে দোয়া করা উচিত। কোরআন ও হাদিসে এ থেকে বাঁচতে কিছু দোয়া বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি দোয়া উল্লেখ করা হলো: 

কুরআনে বর্ণিত দোয়া: 


"রাব্বানা আফরিগ আলাইনা ছাবরান ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমিন।" (সূরা আরাফ, আয়াত: ১২৬) 

অর্থ: "হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের ধৈর্য্য দান করুন এবং আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দিন।" 


"রাব্বানা লা তাজআল ফি কুলুবিনা গিল্লন লিল্লাযিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রউফুর রাহিম।" (সূরা হাশর, আয়াত: ১০) 

অর্থ: "হে আমাদের পালনকর্তা, মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি তো দয়ালু, পরম করুনাময়।" 


হাদিসে বর্ণিত দোয়া: 

"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন শার্রি মা আমিলতু ওয়া মিন শার্রি মা লাম আমাল।" 

অর্থ: "হে আল্লাহ, আমি যা করেছি তার মন্দ থেকে এবং যা করিনি তার মন্দ থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।" 


"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল জুয়ি ফা ইন্নাহু বি-সাদ্দজি-উ" (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫৪৪)

অর্থ: "হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষুধা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, কেননা তা নিকৃষ্ট সঙ্গী।" 



উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জু-ই, ফা-ইন্নাহু বি-সাদ্দজি-উ, ওয়া আউজুবিকা মিনাল খিয়ানাতি ফা-ইন্নাহা বি-সাতিল বিত্বানাহ।

অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা থেকে আশ্রয় চাই। কারণ তা নিকৃষ্ট শয্যাসঙ্গী। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই খিয়ানত করা থেকে। কেননা তা খুবই নিকৃষ্ট বন্ধু।


এছাড়াও, "সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম" এই দোয়াটিও নিয়মিত পাঠ করা উচিত। এটি পাঠ করলে অন্তরের ময়লা দূর হয় এবং হিংসা-বিদ্বেষ কমে যায়। 

এই দোয়াগুলো নিয়মিত পাঠ করার পাশাপাশি, নিজের আচরণ ও চিন্তাভাবনার প্রতিও যত্নবান হতে হবে। সবসময় বিনয়ী ও কৃতজ্ঞ থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং অন্যের ভালো দিকগুলো দেখতে হবে। 



হিংসা থেকে মুক্ত থাকার উপায় বিস্তারিত আলোচনা-

হিংসা থেকে মুক্ত থাকার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। নিজের ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে চিহ্নিত করে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। অন্যের ভালো কিছু দেখলে আনন্দিত হওয়া এবং নিজের যা আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে শিখতে হবে। এছাড়া, ক্ষমা করার মানসিকতা অর্জন করা এবং অন্যের সাফল্যেও খুশি হতে পারা হিংসা থেকে দূরে থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। 

নিজের দুর্বলতা উপলব্ধি করা:

নিজের ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতি, যেমন - ঈর্ষা, বিদ্বেষ ইত্যাদি চিহ্নিত করুন এবং তা দূর করার চেষ্টা করুন।

সন্তুষ্টি অর্জন করা:

নিজের যা আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন এবং অন্যের ভালো কিছু দেখে আনন্দিত হতে শিখুন।

ক্ষমা করার মানসিকতা:

অন্যকে ক্ষমা করে দিন, এতে আপনার ভেতরের কষ্ট দূর হবে এবং হিংসা কমে আসবে।

ইতিবাচক চিন্তা করা:

সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করার চেষ্টা করুন এবং অন্যের ভালো দিকগুলো দেখুন।

সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা:

যা কিছু আছে, তার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন।

অন্যের সাফল্যে আনন্দিত হওয়া:

অন্যের ভালো কিছু দেখলে বা শুনলে মনে কষ্ট না পেয়ে আনন্দিত হোন।

নিজের লক্ষ্য পূরণে মনোযোগ দেওয়া:

অন্যের দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের লক্ষ্য পূরণে মনোযোগ দিন।

নিজেকে ভালোবাসুন:

নিজের প্রতি সদয় হোন এবং নিজের দুর্বলতাগুলোকে গ্রহণ করুন।

যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন:

বন্ধু এবং পরিবারের সাথে বেশি সময় কাটান, এতে একাকিত্ব দূর হবে এবং মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে।

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন:

নিয়মিত ব্যায়াম করুন, সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান ও যোগ ব্যায়াম করতে পারেন।

পেশাদার সাহায্য নিন:

প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

হিংসা একটি মানসিক অবস্থা। এটি দূর করার জন্য চেষ্টা করা প্রয়োজন এবং ধীরে ধীরে হিংসা মুক্ত জীবন যাপন করা সম্ভব।