জিকির ও দোয়ার গুরুত্ব ও সঠিক পদ্ধতি

জিকির ও দোয়ার গুরুত্ব ও সঠিক পদ্ধতি


ইসলামে জিকির ও দুআ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জিকির মানে হলো আল্লাহকে স্মরণ করা এবং দোআ মানে হলো আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া। জিকির আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে এবং দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। যিকির ও দুআ সঠিক পদ্ধতিতে করা উচিত।


জিকিরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

জিকির (ذكر) — আল্লাহকে স্মরণ

অর্থ: "জিকির" অর্থ স্মরণ করা বা উচ্চারণ করা। ইসলামে জিকির মানে আল্লাহর নাম, গুণাবলি ও আয়াতসমূহ স্মরণ করে বলা।


আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়

"স্মরণ করো আমাকেও, আমিও তোমাদের স্মরণ করব..."

— (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫২)


মনের প্রশান্তি লাভ হয়

"নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরে অন্তর প্রশান্ত হয়"

— (সুরা রাদ, আয়াত: ২৮)


গোনাহ মোচন হয়

প্রতিদিন কিছু নির্দিষ্ট জিকির গোনাহ মাফের মাধ্যম।


নেকি বৃদ্ধি পায়

একবার “সুবহানাল্লাহ” বললে একটি গাছ জান্নাতে রোপিত হয় (হাদিস অনুযায়ী)।


জিকির অন্তরের প্রশান্তি আনে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে।

জিকিরকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হন। 


জিকিরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও ফজিলত

সুবহানাল্লাহ: আল্লাহকে সমস্ত ত্রুটি থেকে পবিত্র ঘোষণা

আলহামদুলিল্লাহ: কৃতজ্ঞতা প্রকাশ; জান্নাতের ওজনদার শব্দ

আল্লাহু আকবার: সবকিছুর চেয়ে আল্লাহ বড়; গোনাহ মাফ হয়

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ: ঈমানের মূল কথা; জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে

আস্তাগফিরুল্লাহ: গোনাহর ক্ষমা চাওয়া; আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে যায়

দোয়া (দুআ) — প্রার্থনা ও আল্লাহর কাছে চাই


জিকিরের প্রকারভেদ:

জিকিরে লিসানি (মৌখিক জিকির):

"সুবহানাল্লাহ", "আলহামদুলিল্লাহ", "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ", "আল্লাহু আকবার" ইত্যাদি শব্দ দ্বারা জিকির করা। 

জিকিরে কালবি (আন্তরিক জিকির):

মনে মনে আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং তার গুণাবলী নিয়ে চিন্তা করা। 

জিকিরে আমালি (কর্মের মাধ্যমে জিকির):

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সৎ কাজ করা এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। 


জিকিরের সঠিক পদ্ধতি:

অজু করে পবিত্র অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে বসা।

আল্লাহর নামের অর্থ ও তাৎপর্য অনুধাবন করা।

বিনয়ের সাথে এবং ভক্তিভরে জিকির করা।

নিয়মিত জিকির করা, বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায়।

বিভিন্ন প্রকার দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। 


দোয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

দোয়া ইবাদতের মূল

"দোয়া হলো ইবাদতের মূল" — (তিরমিজি)

দোয়া আল্লাহর দরজায় দরখাস্ত


আল্লাহ দোয়া শুনেন ও উত্তর দেন:

"তোমরা আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব" — (সুরা গাফির, আয়াত: ৬০)

কিয়ামতের আগেই কবুল হয়

হাদিসে এসেছে: তিনভাবে কবুল হয় – এখনই, পরে বা বিপদ দূর করে।


দোয়ার সঠিক আদব ও পদ্ধতি

১. একাগ্রতা ও বিনয় সহকারে দোয়া করা

২. আল্লাহর গুণবাচক নাম দিয়ে শুরু করা (যেমন: “ইয়া রাহমান, ইয়া গাফুর”)

৩. রাসূল ﷺ-এর শেখানো ভাষায় দোয়া করা উত্তম

৪. দোয়ার আগে ও পরে দরুদ শরীফ পাঠ করা

৫. দুই হাত তুলে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা

৬. বারবার চাওয়া (তিনবার করে বলা উত্তম)

৭. হালাল খাদ্য-রোজগার থাকা


দোয়ার সঠিক পদ্ধতি:

দোয়া আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপন করে এবং বান্দার অভাব-অভিযোগ আল্লাহর দরবারে পেশ করার মাধ্যম। 

দোয়া ইবাদতের মূল এবং এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ লাভ করে। 

দোয়া বিপদাপদে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে নেয়ার শ্রেষ্ঠ উপায়। 

আল্লাহ দোয়াকারীকে ভালোবাসেন এবং তার দোয়া কবুল করেন। 

দোয়া শুরু করার আগে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা এবং দরুদ শরীফ পাঠ করা। 

দোয়ায় বিনয়ী ও বিনীত হওয়া এবং নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা। 

দোয়ার মাধ্যমে নিজের প্রয়োজন ও অভাব আল্লাহর কাছে তুলে ধরা। 

শিরকমুক্ত দোয়া করা এবং হারাম জিনিস চেয়ে না চাওয়া। 

আল্লাহর রহমতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দোয়া করা। 

দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ প্রার্থনা করা। 


উপযুক্ত সময়সমূহ যখন দোয়া কবুল হয়

তাহাজ্জুদে

রোযাদার ব্যক্তির ইফতারের সময়

আযানের পর

জুমআর দিন বিশেষ মুহূর্তে

আরাফার দিন

কষ্টে, অসহায় হয়ে করা দোয়া


উপসংহার

জিকির ও দোয়া — মুসলিম জীবনের আত্মিক শক্তি।

এগুলো যেমন গোনাহ মোচন করে, তেমন হৃদয় শান্ত করে ও জীবনের বিপদ থেকে রক্ষা করে।

জিকির ও দোয়া উভয়ই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সঠিক পদ্ধতিতে জিকির ও দোয়া করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এবং পার্থিব ও পরকালীন জীবনে শান্তি লাভ করা যায়।