হজ ও উমরাহর সম্পূর্ণ গাইড
হজ ও ওমরার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা
হজ ও ওমরা উভয়ের জন্য একটি সম্পূর্ণ, সুসংগঠিত এবং সহজে বোধগম্য নির্দেশিকা এখানে দেওয়া হল:
পর্ব ১: উমরাহ (সংক্ষিপ্ত তীর্থযাত্রা)
১. প্রস্তুতি এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা
ই-ভিসা এবং স্বাস্থ্য সনদ: আপনাকে সৌদি আরবের জন্য একটি ওমরা ভিসা (ই-ভিসা/পর্যটক ভিসা) নিতে হবে।
আপনার ব্যাগ প্যাক করা: ইহরামের পোশাক, প্রতিদিনের ওযু করার জন্য সুসংগঠিত সরঞ্জাম, ওষুধ, আরামদায়ক পোশাক।
২. ইহরামে প্রবেশ
মীকাতে (সীমান্তে) পৌঁছে নিম্নলিখিত নিয়ত করে ইহরাম ঘোষণা করুন। পুরুষরা দুটি সাদা পোশাক পরেন, মহিলারা স্বাভাবিক পোশাক পরেন। হাদিস অনুসারে, প্রথমে স্নান করা এবং চুল ও নখ ছাঁটাই করা বাঞ্ছনীয়।
৩. তাওয়াফ
পরপর ৭ বার কাবা প্রদক্ষিণ করা; পুরুষরা প্রথম তিনটি প্রদক্ষিণ দ্রুত ("রমাল") করে।
৪. সা’ই (সাফা-মারওয়া)
সাফা ও মারওয়ার মধ্যে ৭ বার হাঁটা; এখানে হাজর (আ.)-এর ঈমানের কথা স্মরণ করা হয়েছে।
৫. তাকসির বা হাল্ক
পুরুষরা তাদের মাথা মুছবে, মহিলারা তাদের চুলের একটি ছোট অংশ ছিঁড়বে এবং ওমরাহ সম্পন্ন করবে।
পর্ব ২: হজ (প্রধান তীর্থযাত্রা)
সময়কাল:
হজ ৮-১২(১৩) যিলহজ্জ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় এবং তামাত্তু তাহিয়্যাহের মতো বিভিন্ন ধরণের হজে প্রথমে ওমরাহ করা হয়।
১. নিয়ত ও ইহরাম (৮ যিলহজ্জ)
হজের উদ্দেশ্য ও নিয়ম অনুসারে নিয়ত।
মিনা (প্রথম রাত): ফজর সহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা।
২. আরাফাত (৯ যিলহজ্জ)
দুপুরে আরাফাতে জাকাফায়া অনুষ্ঠিত। সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া ও তওবা।
(আরাফাতে জাকাফায়া বলতে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা বোঝায় যা হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ৯ জিলহজ তারিখে হাজিরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন এবং এটি হজের অন্যতম ফরজ কাজ। এখানে অবস্থান করা ছাড়া হজ পূর্ণাঙ্গ হয় না।
ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী, হাশরের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এই আরাফাতের ময়দান। যেখানে সবাই একত্রিত হবে এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের নিয়মাবলী:
সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার ময়দান ত্যাগ করা যাবে না।
৯ জিলহজ সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পর থেকে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের প্রকৃত সময় শুরু হয় এবং এটি আরাফার রাত্রির ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত থাকে।
হাজিরা এখানে অবস্থানকালে খুতবা শোনেন এবং যোহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করেন।
সূর্যাস্তের পর হাজিরা মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফাত ত্যাগ করেন।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের গুরুত্ব:
হজের অন্যতম ফরজ কাজ হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
এটি হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, "হজ হলো আরাফা", অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজের মূল অংশ।)
৩. মুজদালিফা (রাত)
একসাথে মাগরিব-ইশার নামাজ আদায় করা এবং পাথর সংগ্রহ করে রাত কাটানো।
৪. রামি (১০ই জিল-হিজ্জাহ):
তাহমিদ-তাকবীর সহ মিনায় বড় সাতটি পাথর (জামরা আল-আকাবা)
তারপর কুরবানী, তাকসির/হাল্ক, প্রধান তাওয়াফ (ইফাদা), সাঈ।
৫. দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনে (১১ই-১২ই জিল-হিজ্জাহ) রামি
প্রতিদিন ২১টি পাথর: তিনটি জামরায় সাতটি। মিনায় রাত কাটান।
চতুর্থ দিন (১৩ই জিল-হিজ্জাহ দিনের শেষে বা তার বেশি সময় ধরে করা যেতে পারে)।
৬. বিদায় তাওয়াফ (তাওয়াফ আল-ওয়াদা)
মক্কায় ফিরে আসার আগে শেষ তাওয়াফ এবং নামাজ।
অংশ ৩: নিয়মকানুন:
ইহরামের বিধিনিষেধ: সুগন্ধি, চুল ও নখ কাটা ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
নিয়ত, তাবলীয়, তওবা ইত্যাদি বলতে থাকুন।
ভিসা এবং বয়সসীমা: ১২-১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, প্রথমবার যাত্রীদের অগ্রাধিকার।
নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং বরকতময় হজ ও ওমরার জন্য স্তম্ভ এবং শর্তগুলি ভালভাবে অনুসরণ করুন।
আমদানি ভিসার সময়সূচী, সৌদি সরকারের নীতিমালা এবং নতুন নিয়মকানুন সম্পর্কে গভীর নজর রাখুন।
হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য এখানে একটি সম্পূর্ণ নির্দেশিকা দেওয়া হল:
হজ ও ওমরাহ ইসলামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। হজ একটি নির্দিষ্ট সময়ে (জিলহজের ৮ তারিখ থেকে ১২ তারিখ) করতে হয়, যেখানে ওমরাহ বছরের যেকোনো সময় করা যেতে পারে।
হজ ও ওমরাহের মূলনীতি:
ইহরাম:
হজ ও ওমরাহ পালনের জন্য প্রথমে ইহরাম বাঁধতে হবে। এটি একটি বিশেষ পোশাক যা পুরুষরা সাদা সেলাইবিহীন কাপড়ে এবং মহিলারা সাধারণ পোশাকে পরিধান করেন। ইহরাম পরার পর, কিছু কাজ নিষিদ্ধ, যেমন সুগন্ধি ব্যবহার, নখ বা চুল কাটা ইত্যাদি।
তাওয়াফ:
নির্দিষ্ট দুআ সহ কাবাঘর প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলা হয়। হজ ও ওমরা উভয় ক্ষেত্রেই তাওয়াফ করা হয়।
সাঈ:
সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ানোকে সাঈ বলা হয়।
ওমরার ক্ষেত্রে:
ইহরাম বাঁধার পর, তাওয়াফ, সাঈ এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল কাটার মাধ্যমে ওমরা সম্পন্ন করা হয়।
হজ্জের ক্ষেত্রে:
হজ্জের প্রধান আচার-অনুষ্ঠান মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা এবং মক্কায় সম্পন্ন হয়।
হজ্জ ও ওমরার গুরুত্বপূর্ণ স্থান:
কাবা শরীফ:
মসজিদুল হারামে অবস্থিত, এটি মুসলমানদের কিবলা এবং হজ্জ ও ওমরার কেন্দ্রবিন্দু।
সাফা ও মারওয়া:
সৈয়দের স্থান, যা মসজিদুল হারামের কাছে অবস্থিত।
মিনা:
হজ্জের সময়, হাজীরা এখানে রাত কাটাতে এবং শয়তানের প্রতি প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করতে আসেন।
আরাফাত:
মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হজ্জের দিন এখানে অবস্থান করা ফরজ।
মুজদালিফা:
আরাফাত থেকে ফেরার পথে কিছু সময় এখানে অবস্থান করা সুন্নাত।
মদিনা:
মক্কা থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, মসজিদে নববী এবং নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক এখানে অবস্থিত।
হজ্জ ও ওমরার প্রস্তুতি:
সঠিক জ্ঞান অর্জন: হজ্জ ও ওমরার নিয়মকানুন, করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলি আপনার ভালোভাবে জানা উচিত।
শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি: হজ্জ ও ওমরা একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে কঠিন যাত্রা, তাই সুস্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
আর্থিক প্রস্তুতি: হজ্জের জন্য আর্থিক সম্পদের ব্যবস্থা করা উচিত।
পরামর্শ: হজ্জ ও ওমরা সম্পর্কে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
যা আপনার সাথে নিতে হবে: প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন ইহরাম, নামাজের মাদুর, টুপি, মোজা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সরঞ্জাম, ইত্যাদি সাথে রাখুন।
বিধি-বিধান ইত্যাদি।
হজ্জ ও ওমরার ফজিলত:
হজ্জ ও ওমরা পালনের মাধ্যমে অনেক সওয়াব ও ফজিলত অর্জন করা সম্ভব, যা মুসলমানদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তির পথ খুলে দেয়। এটি পাপ ক্ষমার অন্যতম মাধ্যম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম উপায়।
সারসংক্ষেপ এবং পরামর্শ:
নির্দেশনা
প্রস্তুতি: নিয়ত, ভিসা, স্বাস্থ্য, আত্মীয়স্বজনদের সাবধানে রাখুন
ইহরাম: মীকাত, গোসল এবং দান-খয়রাতের উপর নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করুন
তাওয়াফ ও সাঈ: আরবি উচ্চারণ এবং দোয়াগুলি মনে রাখবেন
হজে: মিনা ও আরাফাতে হজের রাতগুলিতে প্রার্থনায় নিবেদিত থাকুন
বিদায়: তাওয়াফ আল-ওয়াদা অবশ্য পালন করুন
আলোকিত মন: হজকে নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং আচরণগত পথে রূপান্তর করুন
বিশেষ টিপস:
হজ্জ ও ওমরা পালনের সময় সকল ধরণের অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন এবং সকলের সাথে ভালো আচরণ করুন।
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা ও দুআ করুন।
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2025 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.