তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষভাগে (বিশেষ করে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পার হওয়ার পর) ঘুম থেকে উঠে আদায় করা নফল নামাজ। এটি দুই রাকাত করে যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যায়। মূল নিয়ম হল, প্রথমে নিয়ত করে "আল্লাহু আকবার" বলে নামাজ শুরু করা, এরপর সানা, সুরা ফাতেহা এবং অন্য যেকোনো সুরা মিলিয়ে রুকু, সেজদা করে দুই রাকাত পূর্ণ করা। এভাবে দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব, পড়া যেতে পারে। তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা নেই, তবে যেকোনো সুরা দিয়ে নামাজ পড়া যায়। 


তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামে খুবই ফজিলতপূর্ণ একটি নামাজ, যা রাতে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর জন্য আদায় করা হয়। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম নিচে ধাপে ধাপে দেয়া হলো:


তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম:

১. ঘুম থেকে উঠা

রাতে কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর ঘুম থেকে উঠতে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের মধ্যবর্তী কোনো সময়ে পড়া হয়, সাধারণত রাতের শেষ তৃতীয় অংশে।


২. নিয়ত করা (নিয়ত নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য নির্ধারণ)

নিয়ত করবেন, উদাহরণ:

"আমি আল্লাহর জন্য দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি।"


৩. আদব ও প্রস্তুতি

ওজু করুন (নিরবচ্ছিন্ন ওজু থাকতে হবে)।

সিজদায় বেশি সময় ব্যয় করা।

কিবলায় মুখ করুন।

ধীরে ধীরে ও খুশিভরে নামাজ পড়ুন।


৪. তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত হবে?

কমপক্ষে ২ রাকাত (দুই রাকাত একসাথে)।

বেশিরভাগ সময় ২ বা ৪ রাকাত একসাথে আদায় করা হয়।

ইচ্ছা করলে ৮, ১০, ১২ বা আরো বেশি রাকাত পড়া যায়।

শেষেই উইতর নামাজ (১, ৩, ৫ বা ৭ রাকাত) পড়া উত্তম।


৫. রাকাতের নিয়ম

প্রতি ২ রাকাত পড়ার পর তাশাহহুদ ও সালাম দিয়ে শেষ করতে হয়।

প্রত্যেক রাকাতে ফাতিহা সূরা ও আরেকটি সূরা পড়তে হবে।


৬. দোয়া ও কোরআন তেলাওয়াত

নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।

তাহাজ্জুদ নামাজের পরে কোরআন পড়া বা জিকির করা উত্তম।


৭. উইতর নামাজ পড়া

তাহাজ্জুদ নামাজের পর উইতর নামাজ পড়া সুন্নত মুআক্কাদা (বেশি জোর দিয়ে সুন্নত)।


তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম: 

নিয়ত:

মনে মনে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে।

তাকবীরে তাহরিমা:

"আল্লাহু আকবার" বলে নামাজ শুরু করতে হবে।

সানা:

"সুবহানাকাল্লাহুম্মা... " দোয়াটি পড়তে হবে।

কেরাত:

সুরা ফাতেহা এবং এর সাথে অন্য যেকোনো সুরা বা যেকোনো পরিমাণ আয়াত মেলানো যেতে পারে।

রুকু ও সেজদা:

রুকু ও সেজদা সহকারে নামাজ আদায় করতে হবে।

সালাম:

প্রতি দুই রাকাত পর পর বসে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে ডানে ও বামে সালাম ফেরাতে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব:

তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর কাছে প্রিয় একটি ইবাদত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন এবং সাহাবীদেরও উৎসাহিত করতেন শিক্ষক বাতায়ন। 

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তাহাজ্জুদের নামাজের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে


তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত 

তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বাংলায় এভাবে নিয়ত করতে পারেন: "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নফল নামাজ কিবলামুখী হয়ে আদায় করার নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার।" 

তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য আরবিতে নিয়ত হলো: "নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাই সালাতিত তাহাজ্জুদি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।" 

এই নিয়তগুলির মাধ্যমে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।


তাহাজুদ নামায সহজভাবে পড়ার নিয়ম 

তাহাজুদ নামায সহজভাবে পড়ার নিয়ম এই যে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করা। আর যারা লম্বা ক্বিরাত মুখস্ত পারেন তাদের জন্য লম্বা ক্বিরাত পাঠ করাই উত্তম।

নামায আদায় করার পর কতিপয় অযিফা পাঠ করলে খুবই সাওয়াব পাওয়া যায়। 


নামায শেষে দোয়া

১। নামায শেষে এই দোয়া একশো বার পাঠ করবে—


رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ


উচ্চারণ: রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাস সামিউল আলীম

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের এই কাজটি কবুল করুণ। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৭)


২। নিম্নের দুআ একশোবার পাঠ করবে


رَبَّنَا أَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَ فِى الْأَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ


উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতও ওয়াক্বিনা আজাবান নার। (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১)

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে নাজাত দান করুন।



৩। নিয়ে দুআ একশো বার—


لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ


উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন।

অর্থ : আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী। -সূরা আল আম্বিয়া : ৮৭


উইতর (Witr) নামাজ

উইতর (Witr) নামাজ হলো রাতের এশার নামাজের পর এবং ফজরের নামাজের পূর্বে পড়া একটি বিজোড় সংখ্যক রাকাআত বিশিষ্ট নামাজ। এটি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত নামাজ। সাধারণত এক, তিন, পাঁচ, সাত, নয় বা এগারো রাকাত পড়া হয়, তবে সর্বনিম্ন এক রাকাত পড়া যায়। 

উইতর নামাজ পড়ার নিয়ম:

নিয়ত:

প্রথমে মনে মনে বিতর নামাজের নিয়ত করতে হবে।

রাকাআত সংখ্যা:

এক বা একাধিক বিজোড় রাকাআত (যেমন: এক, তিন, পাঁচ ইত্যাদি) পড়ার জন্য নিয়ত করতে হবে। 

সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা:

প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হয়। 

রুকু ও সিজদা:

অন্যান্য নামাজের মতোই রুকু ও সিজদা করতে হবে। 

দুআয়ে কুনুত:

তিন বা তার অধিক রাকাআত পড়লে, শেষ রাকাআতে রুকুর আগে বা পরে দুআয়ে কুনুত পড়তে হয়। 

সালাম:

নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে বিতর নামাজ সম্পন্ন করতে হয়। 

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

বিতর নামাজ এশার নামাজের পর থেকে ফজর পর্যন্ত পড়া যায়। 

বিতর নামাজে সূরা ফাতিহার পর যে কোনো সূরা পড়া যায়, তবে সুরা আলা, কাফিরুন ও ইখলাস পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। 

বিতর নামাজে দুআয়ে কুনুত পড়ার আগে তাকবীরে তাহরিমার মতো হাত তোলার কোনো বিধান নেই। 

যদি কেউ বিতর নামাজ না পড়েন, তবে তিনি গুনাহগার হবেন না, তবে এটি সুন্নত হওয়ার কারণে পড়া ভালো। 


সংক্ষেপে:

রাতে ঘুম থেকে উঠুন → নিয়ত করুন → ২ বা ৪ রাকাত নামাজ পড়ুন → তাশাহহুদ ও সালাম দিয়ে শেষ করুন → ইচ্ছা করলে আবার পড়ুন → শেষে উইতর নামাজ পড়ুন।