হয়রানি বা হুমকির শিকার হলে কী ধরনের মামলা করা যায়?
হয়রানি বা হুমকির শিকার হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭ ধারায় মামলা করা যেতে পারে, যা শান্তি ভঙ্গের কারণে করা হয়। এছাড়াও, কেউ যদি শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির শিকার হন, তবে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা করা যেতে পারে, যেমন ৫০৬ ধারায় (অপরাধমূলক ভয় দেখানো)।
আরও কিছু বিষয় যা মামলার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে:
যদি কোনো ব্যক্তি হুমকি বা হয়রানির শিকার হন, তবে তিনি প্রথমে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেন।
জিডি করার পর, পুলিশ যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়, তবে তিনি আদালতে গিয়েও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
যদি হয়রানি বা হুমকি অনলাইনে হয়ে থাকে, তবে ফেসবুক পেজ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ) অথবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যেতে পারে।
যদি কোনো ব্যক্তি হয়রানির শিকার হন, তবে তিনি আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।
দণ্ডবিধির যেসব ধারায় মামলা করা যেতে পারে:
৫০৬ ধারা: এই ধারায় অপরাধমূলক ভয় দেখানোর জন্য মামলা করা যেতে পারে।
৩০৭ ধারা: যদি হত্যার চেষ্টা করা হয়, তবে এই ধারায় মামলা করা যেতে পারে।
৩৪১ ধারা: অন্যায়ভাবে কাজে বাধা দেওয়ার জন্য মামলা করা যেতে পারে।
৩৫৪ ধারা: কোনো নারীর শ্লীলতাহানি বা যৌন হয়রানির চেষ্টা করলে এই ধারায় মামলা করা যেতে পারে।
এছাড়াও, হয়রানির ধরন ও পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের করা যেতে পারে।
হয়রানি বা হুমকির শিকার হলে বাংলাদেশে আপনি আইনগতভাবে প্রতিকার পেতে পারেন, এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এক বা একাধিক ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন। আপনি যেভাবে হুমকি বা হয়রানির শিকার হয়েছেন, তার ভিত্তিতে মামলার ধরণ ও আইন পরিবর্তিত হয়।
কোন ধরনের হয়রানি হলে কী মামলা করা যায়:
মারধরের হুমকি, প্রাণনাশের ভয়: দণ্ডবিধি ৫০৬ ধারায় "হুমকি" মামলা
বারবার কল, এসএমএস, পিছু নেওয়া: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন + ৫০৯ ধারা
নারীকে অপমান বা অশ্লীল কথা বলা: দণ্ডবিধি ৫০৯ ধারায় মামলা (নারী সম্মানহানি)
চাঁদা দাবি বা ভয় দেখানো: দণ্ডবিধি ৩৮৫ / ৫০৬ / সন্ত্রাস বিরোধী আইন
সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার, ছবি এডিট করে শেয়ার: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮
ইভ টিজিং বা রাস্তায় অশালীন আচরণ: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন
বাসায় গিয়ে হয়রানি বা নজরদারি: দণ্ডবিধি ৪৪৭ (অবৈধ অনুপ্রবেশ) ও ৫০৬
ব্ল্যাকমেইলিং বা ভিডিও রেকর্ড ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়: পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন + ডিজিটাল আইন
আইনি পদক্ষেপ – আপনি যা করতে পারেন:
১. জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করুন:
নিকটস্থ থানায় গিয়ে লিখিতভাবে জানাতে পারেন
এটি ভবিষ্যৎ মামলা বা নিরাপত্তার জন্য প্রাথমিক সুরক্ষা
২. এফআইআর (FIR) দায়ের করুন:
অপরাধ গুরুতর হলে, সরাসরি ফৌজদারি মামলা রুজু করা যায়
পুলিশ তদন্ত শুরু করে
৩. আদালতে মামলা (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে):
আপনি চাইলে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ফৌজদারি অভিযোগপত্র দিতে পারেন (৩২২ ধারা অনুযায়ী)
৪. ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহ করুন:
কল রেকর্ড, মেসেজ, স্ক্রিনশট, ভিডিও ক্লিপ—এগুলো ভবিষ্যতে মামলা জেতার জন্য অপরিহার্য
যদি হুমকি হয় জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে:
"ধারা ৫০৬ (বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০)" অনুযায়ী মামলা করতে পারবেন।
উদাহরণ:
“তোকে দেখে নেব, তোকে মেরে ফেলব, পুলিশের কিছু করতে পারবি না”—এমন হুমকি দিলে এটি স্পষ্টত ফৌজদারি অপরাধ।
নারী ও শিশু যদি ভুক্তভোগী হয়:
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে
ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অপহরণ, ইভটিজিং সব কিছু অন্তর্ভুক্ত
মামলা দায়েরের জন্য প্রয়োজনীয় নথি:
পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট
ঘটনার বিস্তারিত: কবে, কোথায়, কে, কীভাবে হয়রানি করেছেন
প্রমাণ: ছবি, স্ক্রিনশট, রেকর্ডিং, সাক্ষী
আইনজীবী: মামলা প্রস্তুত ও ফাইল করতে সহায়তা করবে
জরুরি সহায়তা:
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স: ৯৯৯ (টোল ফ্রি)
নারী ও শিশু নির্যাতন হেল্পলাইন: ১০৯
সাইবার ক্রাইম ইউনিট (DMP):www.cttc.dmp.gov.bd
নিচে একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) এবং একটি মামলার আবেদনপত্র (অভিযোগ) — দুই ধরনের ড্রাফট তৈরি করে দিচ্ছি, যা আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করে ব্যবহার করতে পারেন।
১. জিডি (সাধারণ ডায়েরি) আবেদনপত্রের নমুনা (বাংলায়):
তারিখ: ০৯ জুলাই ২০২৫
প্রতি
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি),
[থানার নাম] থানা,
[জেলার নাম]।
বিষয়: হুমকি ও হয়রানির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার আবেদন।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি [আপনার নাম], পিতা: [পিতার নাম], গ্রাম/বাসা: [ঠিকানা], থানাঃ [থানার নাম], জেলা: [জেলা] একজন শান্তিপ্রিয় নাগরিক।
গত কিছুদিন ধরে জনাব [বিবাদীর নাম], পিতা: [যদি জানা থাকে], ঠিকানা: [বিবাদীর ঠিকানা] আমাকে নিয়মিতভাবে [ফোনে / সরাসরি] হুমকি প্রদান করছেন এবং সামাজিকভাবে হয়রানি করছেন। তিনি আমাকে বলেন “[আপনার প্রতি বলা হুমকির বক্তব্য লিখুন, যেমন: তোকে দেখে নেব / মেরে ফেলব / মানসম্মান নষ্ট করব ইত্যাদি]”।
আমি এই ঘটনায় মানসিকভাবে চরম ভীত ও শঙ্কিত অবস্থায় রয়েছি। ভবিষ্যতে আমার অথবা আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার উক্ত ব্যক্তির ওপর বর্তাবে।
অতএব, আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, বিষয়টি নথিভুক্ত করে আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।
নিবেদক,
[আপনার পুরো নাম]
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: [NID নম্বর]
মোবাইল: [মোবাইল নম্বর]
স্বাক্ষর: __________________
২. ফৌজদারি অভিযোগপত্র (মামলার আবেদন) – ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জমা দেওয়ার জন্য
বিচারপতির প্রতি,
মাননীয় প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট,
[জেলা/উপজেলার নাম]।
বিষয়: হুমকি ও হয়রানি জনিত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ।
জনাব,
আমি, [আপনার নাম], পিতা: [পিতার নাম], সাং: [ঠিকানা], উপজেলা: [উপজেলা], জেলা: [জেলা] একজন সম্মানিত নাগরিক।
গত [তারিখ] থেকে বিবাদী [বিবাদীর নাম], পিতা: [যদি জানা থাকে], ঠিকানা: [ঠিকানা], আমার সাথে শত্রুতার কারণে নানাবিধ হুমকি, মানহানিকর কথা, ও সামাজিকভাবে হয়রানিমূলক আচরণ করে আসছেন। তিনি বলছেন: "[হুমকির বক্তব্য হুবহু লিখুন]”।
এই বিষয়ে আমি স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করার জন্য আবেদন করেছি/করি নাই।
তাঁর এই কার্যকলাপ বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় “আতঙ্ক সৃষ্টি করে হুমকি” অপরাধে অন্তর্ভুক্ত এবং আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয়।
অতএব, আমি বিনীতভাবে প্রার্থনা করছি যে, আপনার বিজ্ঞ আদালত বিবাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিচার নিশ্চিত করবেন।
নিবেদক,
[আপনার নাম]
স্বাক্ষর: _________________
মোবাইল: _________________
তারিখ: _________________
উপসংহার:
হয়রানি বা হুমকি আইনত অপরাধ। ভয় না পেয়ে আইনগত সহায়তা নিন।