ধার দেয়া টাকা ফেরত না পেলে কী করা যায়?-taka ferot na pele ki korben

ধার দেয়া টাকা ফেরত না পেলে কী করা যায়?

যদি ধার দেওয়া টাকা ফেরত না পাওয়া যায়, তাহলে বেশ কিছু আইনি ও অনানুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমে ঋণগ্রহীতার সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। যদি তাও কাজ না করে, তাহলে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো যেতে পারে এবং প্রয়োজনে আদালতে মামলা দায়ের করা যেতে পারে।


ধার দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে যা যা করা যেতে পারে:

১. আলোচনা এবং মধ্যস্থতা:

প্রথমে, ঋণগ্রহীতার সাথে শান্তভাবে কথা বলুন এবং টাকা পরিশোধ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করুন।

প্রয়োজনে, একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন যার মধ্যে তিনি টাকা পরিশোধ করতে রাজি হবেন।

আপনি বন্ধুদের মাধ্যমে বা সালিশি বোর্ডের সাহায্যে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন।

২. আইনি নোটিশ:

যদি আলোচনা কাজ না করে, তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে ঋণগ্রহীতাকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান।

নোটিশে, ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময়কাল এবং টাকা ফেরত না দিলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ উল্লেখ করুন।

এই নোটিশ ঋণগ্রহীতাকে টাকা পরিশোধ করতে উৎসাহিত করবে এবং ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপের ভিত্তি তৈরি করবে।

৩. আদালত মামলা:

নোটিশ পাঠানোর পরেও যদি টাকা ফেরত না দেওয়া হয়, তাহলে সিভিল কোর্টে মানি মামলা করা যেতে পারে।

ঋণগ্রহীতা যদি চেক দিয়ে থাকেন এবং চেকটি অস্বীকৃতি পায়, তাহলে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৩৮ ধারার অধীনে ফৌজদারি মামলা করা যেতে পারে।

৪. অন্যান্য পদক্ষেপ:

প্রয়োজনে, আপনি স্থানীয় থানা বা ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

ছোট দাবির জন্য, ছোট দাবি আদালতে মামলা করা যেতে পারে।

ঋণগ্রহীতার সাথে লিখিত চুক্তি থাকা আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

ঋণ দেওয়ার আগে, একটি লিখিত চুক্তি করা ভালো, যাতে পরিশোধের সময়কাল এবং অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ থাকবে।

প্রয়োজনে, পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আপনার একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা উচিত।


ধার দেয়া টাকা ফেরত না পেলে কি করবেন?

ধার দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে, আপনি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাংলাদেশে এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য দেওয়ানি মামলা (civil suit for recovery of money) দায়ের করার সুযোগ রয়েছে।

নিচে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করছি:

১. প্রমাণ সংগ্রহ করুন

আপনার কাছে যেসব প্রমাণ থাকতে পারে:

লিখিত দলিল/চুক্তি:  স্ট্যাম্পে লেখা চুক্তিপত্র, টাকা দেওয়ার রসিদ

সাক্ষী: যারা দেখেছে যে আপনি টাকা দিয়েছেন

মোবাইল ম্যাসেজ/হোয়াটসঅ্যাপ:  যেখানে টাকা দেওয়ার কথা আছে

বিকাশ/ব্যাংক লেনদেন:  ট্রান্সফারের রেকর্ড

প্রমাণ যত শক্তিশালী হবে, মামলা তত দ্রুত ও আপনার পক্ষে যাবে।

২. প্রথমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান (আইনি চিঠি)

একজন উকিলের মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

এতে উল্লেখ থাকবে:

“অমুক তারিখে টাকা ধার নেওয়া হয়েছে, এখন ফেরত দিন। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সাধারণত ১৫ – ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয়।

৩. টাকা না ফেরত দিলে দেওয়ানি মামলা করুন

মামলা যেভাবে করবেন:

আদালতের ধরন: দেওয়ানি আদালত (সাধারণত সহকারী জজ কোর্ট)

মামলা: Money Suit for recovery of loan/debt

কোর্ট ফি: দাবিকৃত টাকার উপর ভিত্তি করে ১%-৭% পর্যন্ত হতে পারে

আইনজীবী: একজন দেওয়ানি উকিল নিয়োগ করতে হবে

সময়কাল:  ৬ মাস – ২ বছর (জটিলতা অনুযায়ী)

৪. আদালতের আদেশ ও কার্যকর করা

যদি আদালত রায় দেয় যে টাকা ফেরত দিতে হবে,

আপনি ডিক্রি (ডিক্রির মাধ্যমে অর্থ আদায়) করতে পারবেন।

প্রয়োজন হলে আদালত জরিমানা, জব্দ আদেশ (attachment order), এমনকি আসামির সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করার আদেশ দিতে পারে।

৫. বিকল্প ব্যবস্থা: প্রতারণার মামলা (ফৌজদারি)

যদি প্রমাণ থাকে যে:

সে শুরু থেকেই প্রতারণা করে টাকা নিয়েছে ফেরত না দেওয়ার জন্য,

তাহলে আপনি ফৌজদারি মামলাও করতে পারেন – যেমন:

আইন: দণ্ডবিধি ৪২০ ধারা (প্রতারণা)

থানায় এফআইআর বা জিডি করতে পারেন

এতে জেল ও জরিমানা হতে পারে

তবে শুধুমাত্র “ঋণ ফেরত না দেওয়া” মানেই প্রতারণা নয় — এটা প্রমাণ করতে হয়।


সরকারিভাবে কী করা যায়?

যদি আপনি গরিব হন, তাহলে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা (NLASO) বা NGO (BLAST, ASK) এর মাধ্যমে বিনা খরচে মামলা করতে পারেন।

সংক্ষিপ্ত টেবিল

লিগ্যাল নোটিশ: ৩-৭ দিন, উকিলের ফি ~৳২,০০০ – ৳১০,০০০

দেওয়ানি মামলা: ১%-৭% কোর্ট ফি, উকিল ফি আলাদা

প্রতারণা মামলা: থানায় FIR, উকিল লাগতে পারে

প্রমাণ: লিখিত/মৌখিক/ডিজিটাল যেকোনো


লিগ্যাল নোটিশের একটি নমুনা (draft) 

নিচে একটি লিগ্যাল নোটিশের নমুনা (draft) দিচ্ছি, যা আপনি ধার দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে পাঠাতে পারেন। আপনি চাইলে নিজের প্রেক্ষাপটে নাম, ঠিকানা, তারিখ ইত্যাদি পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারবেন।


লিগ্যাল নোটিশের নমুনা (বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে)


               আইনজীবীর প্যাড / চেম্বার নাম

             (যদি প্রিন্ট করতে চান তাহলে এখানে নাম দিন)


তারিখ: [__দিন__] [__মাস__], ২০২৫


প্রাপক:

জনাব [বিবাদীর নাম]

ঠিকানা: [বিবাদীর পূর্ণ ঠিকানা]


বিষয়: ধার দেওয়া টাকা ফেরতের জন্য লিগ্যাল নোটিশ।


জনাব,


আমি আমার মক্কেল [আপনার নাম], পিতা: [পিতার নাম], সাং: [ঠিকানা] – এর পক্ষ হতে আপনাকে এই নোটিশ দিচ্ছি।


১। আমার মক্কেল আপনাকে তারিখ [__] তারিখে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আপনাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মোট টাকা **[৳__] (টাকা __ মাত্র)** ধার দেন।

২। টাকা প্রদানের সময় আপনি মৌখিক/লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন যে [__ দিন/মাস] এর মধ্যে উক্ত টাকা ফেরত দেবেন।

৩। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও আপনি এখন পর্যন্ত উক্ত টাকা ফেরত দেননি এবং বিভিন্ন অজুহাত দিচ্ছেন।

৪। আমার মক্কেল আপনার এই আচরণে ক্ষুব্ধ ও প্রতারিত বোধ করছেন, এবং আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।


অতএব, আপনাকে এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি এই নোটিশ প্রাপ্তির **৭ (সাত) দিনের মধ্যে** আমার মক্কেলের ধার দেওয়া **৳[__]** টাকা ফেরত প্রদান করুন। অন্যথায় আমার মক্কেল আপনাকে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন, যার সকল দায়ভার আপনাকেই বহন করতে হবে।


এই বিষয়ে আপনার সদয় মনোযোগ কাম্য।


নিবেদক,


[আইনজীবীর নাম]  

এডভোকেট  

[বার অ্যাসোসিয়েশন নাম]  

মোবাইল: [__]  

সেল: [__]  


**কপি:**  

- আমার মক্কেল [আপনার নাম], রেকর্ডপূর্বক রাখার জন্য।


আপনার যা সম্পাদনা করতে হবে:

[আপনার নাম]-যিনি টাকা দিয়েছেন

[বিবাদীর নাম]-যিনি টাকা নিয়েছেন

[৳__]-কত টাকা দিয়েছেন

[তারিখ]-কবে টাকা দিয়েছেন

[ঠিকানা]-উভয়ের ঠিকানা

[আইনজীবীর নাম]-যিনি নোটিশ পাঠাবেন


এই নোটিশ কীভাবে পাঠাবেন?

একজন উকিলের মাধ্যমে নোটিশ প্রিন্ট করে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে (with Acknowledgment) পাঠানো উচিত

কপি আপনার কাছে রাখতে হবে

পাঠানোর রসিদ সংরক্ষণ করুন — মামলা হলে প্রমাণ হিসেবে দরকার হবে


উপসংহার

ধার দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে:

প্রমাণ জোগাড় করুন

লিগ্যাল নোটিশ পাঠান

দেওয়ানি মামলা করুন

প্রতারণা হলে ফৌজদারি মামলা বিবেচনা করুন