মোবাইল কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মধ্যে পার্থক্য কী?-mobile court and a magistrate court

মোবাইল কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মধ্যে পার্থক্য কী?

মোবাইল কোর্ট এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট দুটিই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করে, তবে তাদের মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য রয়েছে। মোবাইল কোর্ট সাধারণত তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য গঠিত হয় এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এর নেতৃত্ব দেন, যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি নিয়মিত আদালত যা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয় এবং যেখানে আরও বিস্তৃত পরিসরের মামলা শোনা হয়। 

এখানে এই দুটি বিচারিক ব্যবস্থার মধ্যেকার প্রধান পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো:

মোবাইল কোর্ট:

সংজ্ঞা: মোবাইল কোর্ট হলো একটি সংক্ষিপ্ত আদালত যা তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য গঠিত হয়। 

বিচারক: মোবাইল কোর্টের বিচারক হন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। 

এখতিয়ার: মোবাইল কোর্ট সীমিত এখতিয়ার সম্পন্ন এবং সাধারণত ছোটখাটো অপরাধ ও তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের জন্য গঠিত হয়। 

গঠন: মোবাইল কোর্ট সাধারণত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারের নির্দেশক্রমে গঠিত হয়। 

গুরুত্ব: মোবাইল কোর্ট দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করে। 

ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট:

সংজ্ঞা: ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি নিয়মিত আদালত যা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয়। 

বিচারক: ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক হন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। 

এখতিয়ার: ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বৃহত্তর পরিসরের মামলা পরিচালনা করে, যার মধ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের মামলাই অন্তর্ভুক্ত। 

গঠন: জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ করা হয় এবং তারা সরকারের বিচার বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত হন। 

গুরুত্ব: ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে এবং আইনের সঠিক প্রয়োগে সহায়তা করে। 

সংক্ষেপে, মোবাইল কোর্ট হলো একটি সংক্ষিপ্ত, দ্রুত বিচার ব্যবস্থা যা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি নিয়মিত আদালত যা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয় এবং যেখানে বৃহত্তর পরিসরের মামলা শোনা হয়। 


মোবাইল কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মধ্যে বিস্তারিত পার্থক্য-

মোবাইল কোর্ট এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট—দুটোই বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার অংশ হলেও, এদের কার্যকারিতা, এখতিয়ার, স্থান ও পদ্ধতি একেবারেই আলাদা।

নিচে একটি তুলনামূলক চার্টসহ বিস্তারিত পার্থক্য তুলে ধরছি:

মোবাইল কোর্ট বনাম ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট

মোবাইল কোর্ট

  1. সংজ্ঞা: ভ্রাম্যমাণ আদালত, তাৎক্ষণিক বিচার ও দণ্ড দেয়
  2. আইনি ভিত্তি: মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯
  3. কার্যস্থল: যে কোনো স্থান (রাস্তা, বাজার, হাট, কারখানা)
  4. কার্যপ্রণালী: তাৎক্ষণিক বিচার, অপরাধ করলে সেখানেই শাস্তি
  5. বিচারক: একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
  6. অভিযুক্তের অধিকার: স্বীকার করলে শাস্তি, না করলে মামলাটি কোর্টে পাঠানো হয়
  7. শাস্তির ধরন: তাৎক্ষণিক জেল, জরিমানা বা উভয় (স্বল্প মেয়াদে)
  8. ব্যবহার হয়: ভেজাল খাদ্য, হাট-বাজারে ওজনে কম দেওয়া, মাস্ক না পরা, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা ইত্যাদি
  9. আপিলযোগ্যতা: দণ্ড দিলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতে আপিল করতে পারেন

ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট

  1. সংজ্ঞা: নিয়মিত আদালত, স্থায়ীভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করে
  2. আইনি ভিত্তি: ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC), ১৮৯৮
  3. কার্যস্থল: নির্দিষ্ট আদালত ভবন (কোর্ট)
  4. কার্যপ্রণালী: নিয়ম অনুযায়ী চার্জশিট, শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ ইত্যাদি
  5. বিচারক: একজন বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট
  6. অভিযুক্তের অধিকার: প্রতিরক্ষা, আইনজীবী নিয়োগ, জামিন, আপিলের অধিকার
  7. শাস্তির ধরন: দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়
  8. ব্যবহার হয়: জঘন্য অপরাধ, ফৌজদারি মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন, চুরি, প্রতারণা ইত্যাদি
  9. আপিলযোগ্যতা: নিয়মিত আপিলের অধিকার রয়েছে

মোবাইল কোর্টের কিছু উদাহরণ:

মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি: জরিমানা বা ১-৭ দিনের জেল

রাস্তা অবরোধ করে দোকান বসানো: জরিমানা

মাস্ক না পরা (COVID সময়কালীন): তাৎক্ষণিক জরিমানা

হোটেলে নোংরা খাবার পরিবেশন: জরিমানা বা সিলগালা


উপসংহার:

মোবাইল কোর্ট মূলত তাৎক্ষণিক আইন প্রয়োগ ও ছোটখাটো অপরাধ দমনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট হলো মূল বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি — যেখানে অপরাধ প্রমাণ, যুক্তিতর্ক, সাক্ষ্য ও আইনি অধিকার নিশ্চিত করা হয়।