quran: কোরআনের পরিচিতি

কোরআনের পরিচিতি


১. কোরআন কী?

কোরআন বা আল-কুরআন (القرآن) হলো ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। এটি আল্লাহর বাণী, যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ধাপে ধাপে অবতীর্ণ হয়েছে জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতার মাধ্যমে। কোরআন মানবজাতির হিদায়াতের (সঠিক পথের নির্দেশনা) সর্বশেষ, পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ।


২. কোরআনের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:

ভাষা: আরবি

আয়াত সংখ্যা: ৬,২৩৬ (কিছু হিসেবে ৬,৬৬৬ ধরা হয়, তবে প্রচলিত হিসেব ৬,২৩৬)

সূরা সংখ্যা: ১১৪টি

নাজিলের সময়কাল: প্রায় ২৩ বছর (৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)

নাজিলের স্থান: মক্কা ও মদীনা (মক্কায় নাজিলকৃত সূরাগুলোকে মক্কী, মদীনায় নাজিলকৃত সূরাগুলোকে মাদানী সূরা বলে)


৩. কোরআনের বিষয়বস্তু:

কোরআন শুধুই ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এর বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করে—

তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ)

রিসালাত (নবী-রাসূলদের প্রেরণ ও তাঁদের দায়িত্ব)

আখিরাত (পুনরুত্থান, হাশর-নাশর, জান্নাত-জাহান্নাম)

শরীয়ত ও হালাল-হারামের বিধান

নীতি-নৈতিকতা ও সামাজিক ন্যায়

পূর্ববর্তী উম্মত ও নবীদের কাহিনী (উপদেশস্বরূপ)

মানুষকে সৎ পথে চলার আহ্বান


৪. কোরআনের গুরুত্ব:

মুসলমানদের জন্য এটি জীবনের দিশারী।

নামাজসহ প্রতিটি ইবাদতের মূল উৎস এই কোরআন।

এটি পাঠ ও মুখস্থ করা ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

কোরআনের প্রতিটি বাণী অপরিবর্তনীয় ও সংরক্ষিত (সূরা হিজর, আয়াত ৯: “আমি নিজেই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই একে রক্ষা করব।”)


৫. কোরআনের প্রভাব:

মুসলিম সভ্যতা, সাহিত্য, আইন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দর্শনের ভিত্তি এই কোরআনের ওপর।

এটি মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা—শান্তি, ন্যায় ও ইনসাফের বার্তা বহন করে।


কুরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:

অবতরণ:

কুরআন নাজিল হওয়া শুরু হয় ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে, রমজান মাসের কদরের রাতে, হেরা গুহায়, যখন মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স ৪০ বছর ছিল। 

সংকলন:

কুরআন প্রথমে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে (যেমন: চামড়া, পাথর, গাছের পাতা) লেখা হতো এবং কিছু সাহাবা (সঙ্গী) এটি মুখস্থ করতেন। পরবর্তীতে, খলিফা আবু বকরের (রা.) শাসনামলে এটি গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়, এবং উসমান (রা.)-এর শাসনামলে একটি প্রমিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। 

বিষয়বস্তু:

কুরআন মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে আলোকপাত করে। এতে আল্লাহর একত্ব, নবীদের কাহিনী, আইনকানুন, নৈতিক শিক্ষা, এবং পরকালের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। 

ভাষা:

কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটি আল্লাহর মনোনীত ভাষা। 

গুরুত্ব:

মুসলমানদের কাছে কুরআন তাদের ধর্ম ও জীবনের পথপ্রদর্শক। এটি তাদের বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, এবং নৈতিকতার ভিত্তি। 

কুরআনের এই সংক্ষিপ্ত পরিচিতি থেকে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায়।