প্রতিদিনের সকাল-সন্ধ্যার জিকির তালিকা
নিচে আপনাকে হাদিস-ভিত্তিক প্রতিদিনের সকাল ও সন্ধ্যার গুরুত্বপূর্ণ জিকির ও দোয়ার তালিকা দিচ্ছি, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে পাঠ করতেন বা উম্মতদের পাঠ করতে উৎসাহ দিয়েছেন।
সকাল ও সন্ধ্যার জিকির তালিকা
(সকাল: ফজরের পর সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত | সন্ধ্যা: আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত)
১. আয়াতুল কুরসি
সূরা বাকারা: ২৫৫
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُہٗ سِنَۃٌ وَّلَا نَوۡمٌ ؕ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَمَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَہٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِہٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَمَا خَلۡفَہُمۡ ۚ وَلَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِہٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ کُرۡسِیُّہُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ ۚ وَلَا یَـُٔوۡدُہٗ حِفۡظُہُمَا ۚ وَہُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।
আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদা রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, তাঁরই। কে সেই ব্যক্তি যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট সুপারিশ করে? তিনি লোকদের সমুদয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অবস্থা জানেন। পক্ষান্তরে মানুষ তাঁর জ্ঞানের কোনকিছুই আয়ত্ত করতে সক্ষম নয়, তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছে করেন সেটুকু ছাড়া। তাঁর কুরসী আকাশ ও পৃথিবী পরিবেষ্টন করে আছে এবং এ দুয়ের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না, তিনি উচ্চ মর্যাদাশীল, মহান।
রক্ষা ও বরকতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ
সকাল ও সন্ধ্যায় ১ বার।
২. তিন কুল – ইখলাস, ফালাক, নাস
সূরা: আল-ইখলাস, আল-ফালাক, আন-নাস
৩ বার করে পড়া সুন্নাহ।
এটি “রূহানী ঢাল” হিসেবে কাজ করে।
৩. সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ
১০০ বার (সকাল ও সন্ধ্যায়)।
হাদিস: "যে এটি ১০০ বার পাঠ করে, তার গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় – যতটুকু সমুদ্রের ফেনা হয়।"
— (সহীহ বুখারী)
৪.
দোয়া: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ:
“আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা শুধু তারই জন্য। তিনি সর্বশক্তিমান।"
لَا إِلَهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ...
১০ বার বা ১০০ বার সকালবেলায়।
হাদিসে আছে: এটি পাঠ করলে শয়তান থেকে সুরক্ষা ও জান্নাতের সুসংবাদ।
৫. আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি
১০০ বার
"আমি দিনে শতবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।" – (বুখারী)
৬. হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম। অর্থ : আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। আমি তারই উপর নির্ভর করি। তিনি মহা আরশের অধিপতি। ফজিলত পূর্ণ দোয়া।
حَسْبِيَ اللَّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
৭ বার (সকাল ও সন্ধ্যায়)।
হাদিস: কষ্ট, বিপদ, রিজিক–সবকিছুর জন্য যথেষ্ট।
৭. আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজাঝি
অর্থ : "হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে পেরেশানি ও দুশ্চিন্তা থেকে আশ্রয় চাই এবং আপনার কাছে অক্ষমতা ও অলসতা থেকেও আশ্রয় চাই।"
اللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ...
দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা থেকে মুক্তির দোয়া।
সকাল ও সন্ধ্যায় ১ বার।
৮. রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসুলা।
অর্থ: “আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মদ (স.)-কে রাসুল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি।” (মুসলিম: ১৮৮৪; আবু দাউদ: ১৫২৯; মুজামু কাবির: ৮৩৮; মুজামুস সাহাবাহ: ১৬৯৬)
رَضيتُ بالله رَبّاً ، وبالإسلامِ ديناً ، وبمحمَدٍ نَبِيًّا وَّرَسولاً
৩ বার (সকাল ও সন্ধ্যায়)।
হাদিস: “জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়” – (তিরমিজি)
৯. আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি; আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা অর্থ : হে আল্লাহ, আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে।
اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
৩ বার
শারীরিক ও আত্মিক সুস্থতার দোয়া।
"আল্লাহুম্মা আফিনি" একটি দোয়া যা শারীরিক সুস্থতার জন্য পড়া হয়। এর অর্থ হল, "হে আল্লাহ, আমাকে নিরাপত্তা দিন"। এটি বিশেষভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- দেহ, শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির সুস্থতা চেয়ে পড়া হয়।
এই দোয়াটি মূলত:
"আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি" - হে আল্লাহ, আমাকে শারীরিক সুস্থতা দান করুন।
"আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি" - হে আল্লাহ, আমাকে শ্রবণশক্তিতে সুস্থ রাখুন।
"আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি" - হে আল্লাহ, আমাকে দৃষ্টিশক্তিতে সুস্থ রাখুন।
এই দোয়াটি ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর ৩ বার পড়ার কথা বলা হয়েছে, যা শারীরিক সুস্থতা ও অসুস্থতা থেকে মুক্তি লাভের জন্য পড়া হয়
১০. দরুদ শরীফ
ছোট দরুদ:
"সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম" (অর্থ: তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)।
দরুদে ইব্রাহীম:
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা ওয়া আলা আলি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরা-হীমা ওয়া আলা আলি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ, মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন, যেমনটি আপনি ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর শান্তি বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ, মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনটি আপনি ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁর বংশধরদের উপর বরকত নাযিল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।
আরবি:
اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ .. اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
অন্তত ১০ বার সকালে ও সন্ধ্যায়।
সকাল-সন্ধ্যার জিকির (স্মরণ) ও দোয়ার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
সকালের জিকির:
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (১০০ বার): سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ (অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি)।
আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি ওয়া আতুবু ইলাইহি (১০০ বার): أَسْتَغْفِرُ ٱللَّٰهَ رَبِّي وَأَتُوبُ إِلَيْهِ (অর্থ: আমি আমার রব আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি)।
আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা ওয়া বিকা আমসাইনা ওয়া বিকা নাহয়্যা ওয়া বিকা নামুতু ওয়া ইলাইকান নুশুর (একবার): اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُورُ (অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নামে সকাল শুরু করলাম, আপনার নামে সন্ধ্যা নামাব, আপনার নামেই বাঁচি এবং আপনার নামেই মৃত্যুবরণ করব, আর আপনার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান)।
আয়াতুল কুরসী (একবার): (সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত)।
সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস (প্রত্যেকটি ৩ বার করে):।
আউযু বিকালিমা-তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্ব (৩ বার): أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ (অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায় তার সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি)।
বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুর্রু মাআসমিহী শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলীম (৩ বার): بِسْمِ اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ (অর্থ: সেই আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে সাথে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ)।
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআ ওয়া রিযকান তাইয়্যেবা ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বিলা (একবার): اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا (অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি)।
সন্ধ্যার জিকির:
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (১০০ বার): سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ।
আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি ওয়া আতুবু ইলাইহি (১০০ বার): أَسْتَغْفِرُ ٱللَّٰهَ رَبِّي وَأَتُوبُ إِلَيْهِ।
আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা ওয়া বিকা আমসাইনা ওয়া বিকা নাহয়্যা ওয়া বিকা নামুতু ওয়া ইলাইকান নুশুর (একবার): اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُورُ।
আয়াতুল কুরসী (একবার)।
সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস (প্রত্যেকটি ৩ বার করে)।
আউযু বিকালিমা-তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক (৩ বার)।
পরামর্শ:
একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন (সুবহে সাদিকের পর ও আসরের পর)।
হালকা কণ্ঠে ও একাগ্রচিত্তে পড়ুন।
চাইলে বই বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করুন সহজতার জন্য।
১০–১৫ মিনিটে করা সম্ভব — ধারাবাহিকভাবে করলে অভ্যাসে পরিণত হবে।