সূরা আল-হিজর মূল বিষয় ও শিক্ষা কি?

সূরা আল-হিজর মূল বিষয় ও শিক্ষা কি?


সূরা আল-হিজর (সূরা নম্বর: ১৫) মক্কায় অবতীর্ণ একটি সূরা, যার নাম এসেছে হিজর নামক একটি এলাকার নাম থেকে (যেখানে সামূদ জাতি বসবাস করত)। এটি মোট ৯৯টি আয়াত নিয়ে গঠিত। নিচে সূরাটির মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:


মূল বিষয়বস্তু:

কুরআনের সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণ:

সূরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়াতে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেন যে তিনি কুরআন নাজিল করেছেন এবং তিনি-ই এর সংরক্ষক।


إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا ٱلذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَـٰفِظُونَ

“নিশ্চয় আমিই যিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর রক্ষণাবেক্ষণকারী।”

(আয়াত ৯)


কাফেরদের অবিশ্বাস ও অবজ্ঞা:

কাফেররা নবীর প্রতি সন্দেহ, কুরআন সম্পর্কে উপহাস ও মিথ্যা অভিযোগ আনতো—আল্লাহ তাদের প্রতিক্রিয়া ও পরিণতির বর্ণনা করেছেন।


পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংস:

আদ, সামূদ, লূতের জাতির মতো ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর ইতিহাস বর্ণনা করে সতর্ক করা হয়েছে যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করেছিল।


ইবলিস ও আদমের সৃষ্টি কাহিনী:

ইবলিসের অহংকার, সিজদা না করা এবং এর ফলস্বরূপ তার ধ্বংসের ঘোষণা এখানে উল্লেখ আছে।


প্রকৃত মুমিনদের জন্য আশার বাণী:

নবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং জানানো হয়েছে যে মুমিনদের জন্য আল্লাহর সাহায্য নিশ্চিত।


মূল শিক্ষা ও উপদেশ:

কুরআন চিরন্তন ও নিরাপদ:

কুরআনের শব্দ ও অর্থ কখনো পরিবর্তিত হবে না। আল্লাহ নিজেই এর সংরক্ষক।


সত্য সর্বদা বিরোধিতার সম্মুখীন হয়:

ইতিহাসে দেখা যায়, প্রত্যেক নবীকেই তাঁর জাতি মিথ্যা বলেছে। নবী মুহাম্মাদ (সা.)-ও এর ব্যতিক্রম নন, তাই ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে।


অহংকার ধ্বংসের কারণ:

ইবলিসের মতো অহংকারী হলে—এমনকি একটি ভালো অবস্থানে থেকেও—ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।


আল্লাহর রহমতের সীমাহীনতা:

ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর রহমতের দরজা সবসময় খোলা। এটি গাফেলদের জন্য ফিরে আসার সুযোগ।


সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণ শুধু আল্লাহর হাতে:

আকাশ-মাটি ও যা কিছু আছে সব আল্লাহর সৃষ্টি, আর তিনিই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক।


উল্লেখযোগ্য আয়াত:

আয়াত ৯: কুরআনের সংরক্ষণের ঘোষণা।


আয়াত ২৬-৪৪: আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, ইবলিসের অস্বীকৃতি ও তার শাস্তির ঘোষণা।


আয়াত ৮৫: আল্লাহ উদ্দেশ্যহীন কিছুই সৃষ্টি করেননি—সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে গভীর তাৎপর্য।


উপসংহার:

সূরা আল-হিজর আমাদের শেখায় যে আল্লাহর পথ হলো চূড়ান্ত সত্য, যদিও সেটি অবিশ্বাসীদের জন্য গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। এই সূরা থেকে আমরা কুরআনের মর্যাদা, আল্লাহর সৃষ্টির গভীরতা, এবং ধৈর্যের গুরুত্ব শিখি। এটা একজন মুসলিমকে দুনিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মনোবল ও ঈমান জোগায়।