কিভাবে বুঝবেন আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হয়েছে?

আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি আছে কিনা তা কীভাবে বুঝবেন?

আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে, আপনি পেশীতে ব্যথা এবং খিঁচুনি অনুভব করতে পারেন। হাঁটা বা নড়াচড়া করার সময় উরু এবং বাহুতে ব্যথা ছাড়াও, আপনি হাত, বাহু, পা এবং মুখের চারপাশে অসাড়তা অনুভব করতে পারেন। যদি আপনার এমন সমস্যা হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা ভাল। রক্তে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে, আপনার হাত বা পা অসাড় হয়ে যেতে পারে।

পেশীর কার্যকারিতায় ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়ামের কম মাত্রার ফলে অনিচ্ছাকৃত পেশী সংকোচন হতে পারে, বিশেষ করে পায়ে। হাত, পা বা মুখের চারপাশে ঝিনঝিন করা বা অসাড় অনুভূতি ক্যালসিয়ামের ঘাটতির আরেকটি সাধারণ লক্ষণ, যাকে প্রায়শই প্যারেস্থেসিয়া বলা হয়। নখ এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য।  শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে ভঙ্গুর নখ সহজেই ভেঙে যেতে পারে এবং চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনের একটি প্রধান উপাদান। ক্যালসিয়ামের অভাব হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার এবং হাড়ের ব্যথার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ক্যালসিয়াম শক্তি উৎপাদন এবং স্নায়ুর কার্যকারিতায় ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং অন্যান্য হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, হাইপোক্যালসেমিয়া খিঁচুনি, বিভ্রান্তি এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে।

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেজাজের ব্যাধির সাথে যুক্ত হতে পারে, যার মধ্যে বিরক্তি এবং বিষণ্নতা অন্তর্ভুক্ত।

আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে (ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বা হাইপোক্যালসেমিয়া), কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নিচে সহজ ভাষায় ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা দেওয়া হল:


ক্যালসিয়ামের ঘাটতির প্রধান লক্ষণ:

১. হাড় ও দাঁতের সমস্যা

হাড় দুর্বল হওয়া, সহজে ভেঙে যাওয়া (অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি)

দাঁতের সমস্যা বা ঘন ঘন দাঁত ব্যথা

এনামেল ক্ষয়


২. পেশীর টান বা খিঁচুনি

পায়ের পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া

ঘুমের সময় হঠাৎ খিঁচুনি

বাহু ও পায়ে ঝিঁঝিঁ পোকা বা অসাড়তা


৩. চুল, ত্বক এবং নখের দুর্বলতা

চুল পড়া, শুষ্ক চুল

নখ ভাঙা বা পাতলা হয়ে যাওয়া

শুষ্ক ত্বক


৪. অস্থিরতা এবং মনোযোগের অভাব

মাথা ঘোরা বা দুর্বল বোধ

মনোযোগ কমে যাওয়া

বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ


৫. হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ

অনিয়মিত বা দ্রুত হৃদস্পন্দন (ধড়ফড়)

রক্তচাপের ওঠানামা


৬. অনিদ্রা এবং ক্লান্তি

ঘুমের সমস্যা

শরীরের ক্লান্তি, মেজাজ খারাপ


৭. শিশুদের বিশেষ লক্ষণ

হাড়ের বিকৃত বৃদ্ধি (রিকেট)

দাঁতের বৃদ্ধি বিলম্বিত হওয়া

অস্বাভাবিক বৃদ্ধি


কখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন?

যদি আপনার উপরোক্ত লক্ষণগুলির একাধিক থাকে

যদি আপনার ঘন ঘন হাড়ের ব্যথা বা চুল ও নখ ভেঙে যায়

ঘন ঘন পেশীতে টান লাগা


করণীয়:

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: দুধ, দই, পনির, ছোট মাছ, সবুজ শাকসবজি

ভিটামিন ডি: সূর্যের আলোতে এক্সপোজার + প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট

ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট: শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে

যদি আপনার ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ক্রমাগত লক্ষণ থাকে, বিশেষ করে যদি আপনার উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ কারণ থাকে (যেমন পোস্টমেনোপজাল মহিলা, বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক, অথবা ম্যালাবসোর্পশন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি), তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।