feature: ফিচার কী? ফিচার কত প্রকার এবং কী কী? ফিচার লেখার নিয়ম

ফিচার কী? ফিচার কত প্রকার এবং কী কী? ফিচার লেখার নিয়ম

ফিচার কী?

ফিচার হল সাংবাদিকতার একটি শৈল্পিক, বর্ণনামূলক এবং বিশ্লেষণাত্মক অংশ যা পাঠকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে এবং গল্পের মতো তথ্য উপস্থাপন করে। এটি সংবাদের মতো তাৎক্ষণিক নয়, তবে এটি সময়োপযোগী এবং আকর্ষণীয়।


সহজ কথায়:

ফিচার = তথ্য + বিশ্লেষণ + গল্প বলা + পাঠক আকর্ষণ


কত ধরণের ফিচার আছে এবং সেগুলি কী কী?

ফিচার লেখার ধরণ এবং উদ্দেশ্য অনুসারে, সাধারণত ৫টি প্রধান প্রকার থাকে:


১. সংবাদ ফিচার

খবরের গভীর দিক তুলে ধরে।

উদাহরণ: “পদ্মা সেতু: নির্মাণের পেছনের গল্প”


২. প্রোফাইল ফিচার

একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লেখা।

উদাহরণ: “হাসানের জীবনের উত্থান-পতনের গল্প”


৩. মানবিক আগ্রহের ফিচার

মানবীয় গল্প, আবেগ-ভিত্তিক ফিচার।

উদাহরণ: “দিন মজুরের মেয়ে এখন বিসিএস ক্যাডার”


৪. ট্রাভেল/ভ্রমণ ফিচার

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বা স্থান সম্পর্কে রচনামূলক লেখা।

উদাহরণ: “সাজেক ভ্যালিতে ৩ দিন এবং ২ রাত”


৫. কীভাবে করবেন ফিচার

কীভাবে কিছু করবেন — ধাপে ধাপে উপস্থাপন করা হয়েছে।

উদাহরণ: “পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধির ৭টি উপায়”


ফিচার লেখার নিয়ম (কাঠামো এবং কৌশল)

একটি ফিচার লেখার সময় নিম্নলিখিত কাঠামো অনুসরণ করা ভালো:


১. শিরোনাম:

আকর্ষণীয় এবং অর্থবহ হতে হবে

এটি এমনভাবে তৈরি করুন যাতে এটি পাঠককে আকর্ষণ করে


২. ভূমিকা:

পাঠকের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে

এটিকে এমনভাবে লিখুন যেন এটি একটি গল্পের শুরু


৩. মূল অংশ:

তথ্য, উদ্ধৃতি, অভিজ্ঞতা, পরিসংখ্যান, বর্ণনা ব্যবহার করুন

অনুচ্ছেদে ভাগ করুন


৪. উপসংহার:

প্রতিলিপিটি কী বলেছে তা সংক্ষিপ্ত করুন

কখনও কখনও শেষ লাইনে চিন্তার খোরাক যোগ করা ভালো


ফিচার লেখার টিপস:

তথ্য নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখুন

সহজ এবং প্রাণবন্ত ভাষা ব্যবহার করুন

গল্পের মতো উপস্থাপন করুন

বানান এবং ব্যাকরণ সঠিক রাখুন

সাক্ষাৎকার এবং জীবিত অভিজ্ঞতা যোগ করা ভালো

অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক লিখুন, যাতে পাঠক "অনুভূতি"


নীচে একটি ফিচার লেখার উদাহরণ দেওয়া হল-

বিষয়: "একজন গ্রাম্য শিক্ষকের গল্প: আলো ফেরিওয়ালা"

শিরোনাম: আলো ফেরিওয়ালা — একজন গ্রাম্য শিক্ষকের গল্প

ভূমিকা:

মুখে ধুলো আর ঘাম। পুরনো ব্যাগে বই, হাতে চক। সে প্রতিদিন স্কুলে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যায়। তার নাম আব্দুল খালেক — তার বয়স প্রায় ষাট বছর। তবুও আজও তার দিন শুরু হয় ঠিক সকাল ছয়টায়। পেশায় একজন শিক্ষক, কিন্তু তার পরিচয় কেবল একজন শিক্ষক নয় — তিনি একজন আলো ফেরিওয়ালা।


মূল অংশ:

শুরুর গল্প:

১৯৮৫ সালে, "বাটলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়" এই প্রত্যন্ত গ্রামে মাত্র চারজন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে। আব্দুল খালেক স্যার ছিলেন একজন যুবক যিনি সবেমাত্র এইচএসসি পাস করেছিলেন। তিনি কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন, কারণ সেই সময়ে কোনও শিক্ষক নিয়োগ ছিল না।


সংগ্রাম এবং নিষ্ঠা:

প্রথমে, অনেক স্থানীয় লোক হেসেছিল। "শিক্ষা কি আপনার পেট ভরবে?" — তিনি এই প্রশ্নটি অসংখ্যবার শুনেছিলেন। কিন্তু তিনি থামেননি। তিনি দিনের বেলা স্কুলে যেতেন এবং রাতে হারিকেনের আলোয় ঘরে ঘরে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন।


সাফল্যের গল্প:

আজ, সেই স্কুলে ২৫০ জন ছাত্র রয়েছে। খালেক স্যারের কিছু ছাত্র ডাক্তার, কিছু সরকারি কর্মচারী, এমনকি কেউ কেউ তাদের নিজস্ব গ্রামে স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন। তারা গর্বিত কণ্ঠে বলে - "স্যারই আমাদের বানিয়েছেন মানুষ।"


উপসংহার:

আব্দুল খালেক স্যারের মতো লোকেরা নীরবে সমাজে আলো ছড়িয়েছিলেন। তার কোনও পদক বা ক্যামেরার ফ্ল্যাশের প্রয়োজন নেই। ছাত্রদের সাফল্যই তার পুরষ্কার।

আজও, সে প্রতিদিন স্কুলে যায়, এক হাতে বই, অন্য হাতে আলোর স্বপ্ন।


লেখকের মন্তব্য:

"শিক্ষা কেবল চাকরি পাওয়ার মাধ্যম নয়, এটি একজন ব্যক্তিকে গড়ে তোলার একটি অস্ত্র। এবং একজন প্রকৃত শিক্ষক সেই অস্ত্র তুলে দিতে পারেন।"


লেখার ধরণ:

শৈল্পিক, আখ্যান

তথ্য ও আবেগের সংমিশ্রণ

বাস্তববাদী চরিত্র এবং অবস্থান

মানবিক স্পর্শ এবং অনুপ্রেরণা